শুরুতেই বলে রাখি, সম্পূর্ণ পোষ্টটি সুমন চন্দ্র দাদার টাইমলাইন থেকে আমি কালেক্ট করেছি।
“কচিৎ প্রতিমা, কিং প্রতিমা
কিং নিরাধম আদ্যম কিমানামৎ পরিধি কচিৎ॥”
*
❈
অনুবাদঃ-* কিরূপে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি নির্মিত হবে, কি নাম হবে তার?
──(ঋকবেদ- অষ্টম মণ্ডল, ১৮সুক্ত, মন্ত্র ৩)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
“স্যাম অস্যসচামে মৃত্তিকাচামে কিরয়সচামে পর্বতাসচামে।
শিখাতাসচামে বানস্পত্যচামে হিরন্যস্যচামে অপ্সচামে।
শাম্চ্যমে লোহশ্চ্যমে শিষ্যশ্চমে যজ্ঞেন কল্পতাম্॥”
*
❈
অনুবাদঃ-* এই পবিত্র মাটি, ও প্রস্তরে তুমি(ঈশ্বর) এসো,এই মৃত্তিকা দিয়ে তোমার শরীর নির্মিত হোক।”
──(অথর্ববেদঃ- কাণ্ড ২, অনুবাক ৩, মন্ত্র ৪)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
“সহস্র প্রতিমূর্তি বিশ্বরূপম্
পরম ঈশ্বর বিবির্ধ প্রতিমাঃ॥”
*
❈
অনুবাদঃ-* এক পরম ঈশ্বরের অনেক রূপের প্রতিমা বা বিশ্বে রচিত হোক।
──(যজুর্বেদঃ অধ্যায় ১৩, মন্ত্র ৪১)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
“হিরন্ময়েন পাত্রেন সত্যস্যাপিহিতং মুখম্।
তৎ ত্বং পুষন্নপাবৃনু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে॥”
*
❈
অনুবাদঃ-* হে প্রভু! হে সর্বজীবপালক, আপনার উজ্জ্বল জ্যোতির দ্বারা আপনার প্রকৃত মুখরাবিন্দ আচ্ছাদিত। কৃপা করে সেই আচ্ছাদন দূর করুন এবং আপনার শুদ্ধ ভক্তের নিকট নিজেকে প্রদর্শিত করুন।”
──(ঈষোপনিষদ মন্ত্র-১৫)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
❈
“মথুরামণ্ডলে তথা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে, যে ব্যক্তি, আমাকে আমার প্রতিমারূপে উপাসনা করে, সে আমার অত্যন্ত প্রিয়।”
──(গোপালতাপনী উপনিষদ, উত্তর ১৯)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
❀
“তাঁর কোনও তুলনা নেই, তাঁর মহৎ যশ আছে, তিনি হিরণ্যগর্ভ, তাঁর প্রতি অসূয়পরায়ণ হয়ো না, তাঁর থেকে ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ জাত, তিনি স্বরাট।”
──(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ও শুক্ল যজুর্বেদ)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
❀
“হে প্রভু, হে আদিকবি ও বিশ্বপালক, হে যম, শুদ্ধ ভক্তদের পরম গতি এবং প্রজাপতিদের সুহৃদ, কৃপা করে আপনার অপ্রাকৃত রশ্মির জ্যোতি অপসারণ করুন, যাতে, আপনার আনন্দময় রূপ আমি দর্শন করতে পারি। আপনি সনাতন পুরুষোত্তম ভগবান। সূর্য ও সূর্যকিরণের সম্বন্ধের মতো আপনার সঙ্গে আমি সম্বন্ধযুক্ত।”
──(ঈশোপনিষদ, মন্ত্র ১৬)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
❀
“সহস্র মস্তক, সহস্র চক্ষু, সহস্র পদ বিশিষ্ট সেই পরম পুরুষ সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডকে পরিব্যাপ্ত করেও দশ অঙুলি পরিসরের মধ্যে অবস্থান করছেন।”
──(ঋকবেদ- ১০ম মণ্ডল, ৯০/১)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
❀
“ভগবানের প্রতি যিনি অপ্রতিহতা ভক্তিসম্পন্ন এবং শ্রীগুরুদেবের প্রতিও তদরূপ, তিনি পরম পুরুষোত্তম ভগবানকে দর্শন করতে পারেন।”
──(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ-৬/২৩)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
❀
“সর্বত্র হস্ত-বিশিষ্ট,সর্বত্র নেত্র-বিশিষ্ট, সর্বত্র মস্তক ও মুখ বিশিষ্ট, সর্বত্র কর্ণ বিশিষ্ট সেই পরমাত্মা এই বিশ্বচরাচরের সব কিছুতেই পরিব্যপ্ত হয়ে রয়েছেন।”
──(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১৬)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
❈
ঈশ্বরের এক বিরাট, অদ্ভুত, অপ্রাকৃত এবং দিব্য রূপ রয়েছে।পুরুষ অর্থে ব্যক্তিকে বোঝায়।
“এই পরব্রহ্ম পরমাত্মাকে না প্রবচনের মাধ্যমে, না বুদ্ধি দিয়ে, না বহু শ্রবণের মাধ্যমে প্রাপ্ত করা যেতে পারে। ইনি যাঁকে স্বীকার করে নেন, একমাত্র তিনিই তাঁকে প্রাপ্ত হতে পারেন। এই পরমাত্মা তাঁর জন্য, তাঁর যথার্থ স্বরূপটিকে প্রকট করে দেন।”
──(কঠোপনিষদ-১/২/২৩)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
❀
“সূক্ষ্ম থেকেও সূক্ষ্মতর এবং মহৎ থেকেও মহত্তর সেই পরমাত্মা জীবের হৃদয়রূপ গুহায় বিরাজমান রয়েছেন। তাঁরই কৃপায় কোনও ভাগ্যবান জীব দুঃখ ও শোক থেকে মুক্ত হয়ে তাঁকে দর্শন করতে সক্ষম হন।”
──(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ-৩/২০)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
❈
তুমি স্ত্রী, তুমি পুরুষ, তুমিই কুমার, অথবা কুমারী। তুমিই বৃদ্ধরূপ ধারণ করে লাঠির সাহায্যে চল। আবার তুমিই বিরাটরূপে প্রকট হয়ে সর্বদিকে মুখবিশিষ্ট হয়ে যাও।”
──(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ-৪/৩)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
❈
“সর্বত্র চোখ বিশিষ্ট, তথা সর্বত্র মুখ বিশিষ্ট, সর্বত্র হস্ত বিশিষ্ট এবং সর্বত্র পদ বিশিষ্ট, স্বর্গ ও মর্ত্যের সৃষ্টিকর্তা সেই একমাত্র পরমেশ্বর প্রাণীকুলকে হস্ত, ডানা ইত্যাদি প্রদান করেছেন।”
──(ঋকবেদ-১০ম মণ্ডল ৮১/৩))
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
“এক উপাস্য শ্রীকৃষ্ণই সব কিছুর নিয়ন্তা। তিনি এক হয়েও বহু রূপে অবতীর্ণ হন। সেই সমস্ত ঋষিরা, যাঁরা অবিরতভাবে তাঁর উপাসনায় মগ্ন আছেন, তাঁরাই চিরস্থায়ী সুখ অর্জন করতে সক্ষম হন,অন্য কেউ না।”
──(গোপালতাপনী উপনিষদ ১৯(পূর্ব)
─⊱━━━⊱
✥
⊰━━━⊰─
“ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য যস্য নাম মহৎযশঃ
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা যস্মান্ন জাত ইত্যেষ॥”
রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায় ৷
ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে যুক্তা হস্য হরয়াঃ শতা দশ ৷।
(ঋগ্বেদ, ৬/৪৭/১৮)
অনুবাদঃ— “রূপে রূপে প্রতিরূপ (তাহার অনুরূপ) হইয়াছেন, সেই ইহার রূপকে প্রতিখ্যাপনের (জ্ঞাপনের) জন্য ইন্দ্র মায়াসমূহের দ্বারা বহুরূপ প্রাপ্ত হন। যুক্ত আছে ইহার অশ্ব শত দশ (অর্থাৎ সহস্র)৷”
দ্বে বাব ব্রহ্মণো রূপে মূর্তং চৈবামূর্তং চ মর্ত্যং চামৃতং চ স্থিতং চ যচ্চ সচ্চ ত্যচ্চ।।
(বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ২/৩/১)
অনুবাদঃ— ব্রহ্মের দুইটি রূপ, মূর্ত ও অমূর্ত, মর্ত্য ও অমৃত, স্থিতিশীল ও গতিশীল, সৎ (সত্তাশীল) ও ত্যৎ (অব্যক্ত)।
অগ্নির্যথৈকো ভুবনং প্রবিষ্টো রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব৷
একস্তথা সর্বভূতান্তরাত্মা রূপং রূপং প্রতিরূপো বহিশ্চ৷৷
“অগ্নি যেমন এক হয়েও ভুবনের মধ্যে প্রবেশ করে রুপে রুপে বহুরুপ হয়ে আপনাকে ধরে দিয়েছে, তেমনি সর্বভূতের অন্তরস্থ অন্তরাত্মা এক হয়েও বাহির অবধি ভিন্ন ভিন্ন রুপ গ্রহণ করেছে ৷” (কঠউপনিষদ, ২৷২৷৯)
বায়ুর্যথৈকো ভুবনং প্রবিষ্টো রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব৷
একস্তথা সর্বভূতান্তরাত্মা রূপং রূপং প্রতিরূপো বহিশ্চ৷৷
“বায়ু যেমন এক হয়েও ভুবনের মধ্যে প্রবেশ করে রুপে রুপে বহুরুপ হয়ে আপনাকে ধরে দিয়েছে, তেমনি সর্বভূতের অন্তরস্থ অন্তরাত্মা এক হয়েও বাহির অবধি ভিন্ন ভিন্ন রুপ গ্রহণ করেছে৷” (কঠউপনিষদ, ২৷২৷১০).
“রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব৷ অয়মত্মা ব্রহ্ম সর্ব্বানুভূঃ৷”
অর্থাৎ তিনি প্রতি বস্তুর রুপ ধারণ করিয়াছেন ৷
এই আত্মাই ব্রহ্ম তিনি সর্ব্বগত ৷
(বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ২৷৫৷১৯)
একো বশী সর্বভূতান্তরাত্মা একং রূপং বহুধা যঃ করোতি৷
“একক নিয়ন্তা হয়েও এই সর্বভূতের অন্তরাত্মা একই রুপকে বহুধা করে চলেছে ৷” (কঠউপনিষদ, ২৷২৷১২)
“যো বিশ্বস্য প্রতিমানং বভুব”
(ঋগ্বেদ, ২৷১২৷৯)
অর্থাৎ— তিনি নিখিলের প্রতিমা হইয়াছিলেন ৷
ত্বং হি নঃ পিতা বসো ত্বং মাতা শতক্রতে বভূবিথ অধাতে সুম্নমীমহে!
অর্থাৎ— তিনি (বসো শতুত্রুতো) সব জায়গায় নিবাস করেন এবং সবকিছু সৎকৃত জ্ঞানে ঈশ্বর!
“ইন্দ্রিয়মিন্দ্রলিঙ্গ মিন্দৃষ্টমিন্দ্র সৃষ্ট মন্দ্র জুষ্ট মিন্দ্রদত্তমিতি। (অষ্টাধ্যায়ী, ৫।২।৯৩)
অর্থাৎ— ইন্দ্রয়ম এই শব্দ নিপাতন করা যায়, ইন্দ্র লিঙ্গাদি দ্বারা (বা) বিকল্প দ্বারা। ষষ্ঠ সমর্থ ইন্দ্রশব্দ দ্বারা ঘচ্ প্রত্যয়ের নিপাতন করা উচিৎ। উদাহরণ ইন্দ্রস্য লিঙ্গ ইন্দ্রিয়ম,
(ঋগ্বেদ ১/৫১-৫৭) সূক্ত সমূহের দ্রষ্টা অঙ্গিরা ঋষির পুত্র সব্য ঋষি। মহর্ষি অঙ্গিরা ইন্দ্রসম পুত্র লাভ করিতে অভিলাষী হইয়া ইন্দ্রের উপাসনা করেন। ইন্দ্র স্বয়ং তাঁহার পুত্র হইয়া জন্মগ্রহণ করেন। ঐ পুত্রের নামই সব্য।
এক সৎ ঈশ্বরকেই পণ্ডিতগণরা বহু নামে কল্পনা করেন। তাঁহাদের নাম, অগ্নি, ইন্দ্র, মিত্র ইত্যাদি।
(ঋগ্বেদ, ১/১৬৪/৪৬)।
পবিত্র বেদ ভালভাবে পাঠ করলে এই চরম সত্যটি জানা যায়। অতএব, পবিত্র বেদমতে ইন্দ্রই পরব্রহ্মের একটি নাম ও রূপ।
বিষ্ণুর ত্রিবিক্রমণের, ঋগ্বেদে বহুবার আছে—
ত্রেধা নি দধে পদম (ঋগ্বেদ, ১/২২/১৭)—
তিন পায়ে বিশ্ব আক্রমণের কথা বলা হয়েছে। এই বাক্যে বামন অবতারের কথা বলা হয়েছে।
(কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় সংহিতা, ৭/১/৫/১) মন্ত্রে বলা হয়েছে বরাহ অবতারের কথা।
অদ্বৈতবেদান্তের ব্যাখ্যাকারদের মধ্যে আচার্য শঙ্কর ও মধুসূদন সরস্বতী সর্বশ্রেষ্ঠ। অদ্বিতীয় বেদজ্ঞ পণ্ডিত হয়েও দুজনেই শ্রীকৃষ্ণের অবতার তত্ত্ব স্বীকার করেছেন। বেদে কোন ইঙ্গিত না পাইলে স্বীকার করতেন না। সুতরাং বেদ অবতার তত্ত্ব বিরোধী নয়।
(বেদ বিচিন্তন, ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী)
“ক্লেশকর্মবিপাকশৈয়রপরামৃষ্টঃ পুরুষবিশেষ ঈশ্বরঃ;
(যোগদর্শন, ১/২৪)
ভাবার্থঃ— ক্লেশ, কর্ম, বিপাক ও আশয় এই চারের সঙ্গে যার কোন সম্বন্ধ নেই যিনি সমস্ত পুরুষের মধ্যে উত্তম, তিনিই ঈশ্বর।