আমি আদিত্য চক্রবর্তী ২০১৩ সালে চাঁদপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমে থাকাকালিন যেসব নির্যাতনের শিকার হই তারমধ্যে আমার পোশাক নিয়ে আমাকে নির্যাতন করা অন্যতম সেরা নির্যাতন।
আশ্রমের ছাত্রাবাসে থাকতে হলে অনেকগুলো নিয়ম মেনে চলতে হয়। বাস্তবে জীবনে যার একটা কাজে আসে নাই (আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি)। এরমধ্যে একটি নিয়ম হলো, ভোরবেলা এবং সন্ধ্যাবেলায় আরাধনা করতে হবে। আর সেই আরাধনায় সনাতনীদের ধর্মীয় পোশাক ধুতি নিম্নাঙ্গে পরিধান করতে হবে। কিন্তু উর্ধাঙ্গে কি পরিধান করতে হবে তার নির্দেশনা নাই।
আমি ধুতি পরিধান করা শিখি আমার বাবার কাছ থেকে। যখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম, জন্মসূত্রে আমি ব্রাহ্মণ হওয়ায় তখন আমার উপনয়ন করানো হয়। আমি পৈতা ধারণ করি এবং প্রতিদিন তিনবেলা ধুতি পরিধান করেই মহামন্ত্র গায়ত্রী জপ করি। আর এই পুরা ধুতিটাই পরতাম নিম্নাঙ্গে। উর্ধাঙ্গে ধুতি পরিধান করা আমি, আমার বাবা, তার বাবা, তার বাবা বা বংশের কেউ ফলো করেনি। এখনো করছি না, এবং মৃত্যু পর্যন্ত করবো না।
কিন্তু রামকৃষ্ণ আশ্রমে এসে দেখলাম, অর্ধেক ধুতি নিম্নাঙ্গে পরিধান করে এবং বাকি অর্ধেক ধুতি উর্ধাঙ্গে পরিধান করে। এমনকি এই ফালতু স্টাইলে ধুতি পরা আশ্রম ব্যাতিত আজ পর্যন্ত কোনো ব্রাহ্মণকে বা পুরোহিতকেও দেখিনি।
উর্ধাঙ্গে কাপড় পরিধান নিয়ে এইবার মনুসংহিতায় কি বলেছে সেই কথা বলি। যে ব্যক্তি বা পুরোহিত দেবদেবীর বিগ্রহ অর্চনা করবেন, শুধুমাত্র তিনিই নিম্নাঙ্গে ও উর্ধাঙ্গে সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করবেন। অর্থাৎ শার্ট, টি শার্ট, পাঞ্জাবি ইত্যাদি সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করতে পারবেন না। তারমানে ধুতি এবং নামাবলির কথাই বলা হচ্ছে। যেহেতু কোনটিতেই সেলাই নেই। আর বাকিরা অর্থাৎ প্রার্থনায় যারা অংশগ্রহণ করবেন তাদের নিম্নাঙ্গে ধুতি পরিধান করা থাকবে কিন্তু উর্ধাঙ্গে সেলাইযুক্ত বা সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করা নিয়ে কোনো নির্দেশনা নাই। অর্থাৎ দর্শনার্থীর নিজের ইচ্ছা তিনি যা খুশি তাই পরিধান করুক। এখানে আরেকটা তথ্য বলি, ধুতির কালার কিন্তু সাদা। যদিও শাক্তদের ধুতি লাল কালারের সেটা ভিন্ন বিষয়।
যেহেতু একজন দর্শনার্থীর উর্ধাঙ্গে কাপড় পরিধান করার নিয়ম ঐচ্ছিক, তাই প্রতিদিনের মতই আমি সাদা ধুতি এবং টি শার্ট পরিধান করে সন্ধ্যার প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করি। তখন আমি অদিক্ষিত ছিলাম। না শৈব, না শাক্ত, না বৈষ্ণব, না গানপাত্য। সেদিন আমার টি শার্টের কালার ছিল নীল। আমার সাথে আরোও একজন ছাত্র ছিলেন, তিনিও অন্য কালারের টি শার্ট পরিধান করে প্রার্থনায় এসেছেন। প্রার্থনা শেষ করে হাজিরা নিয়েই আমাদের দুজনকে (বিশেষভাবে আমাকে) গালিবিহীন এত নোংরা ভাষায় অপমান করা হয়েছে তা যদি রেকর্ড করা থাকত তাহলে শুনাতে পারতাম। ২০১৩ তে আমি ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়তাম। আমার বয়সটা তখন ছোটই ছিল। আমাকে মুখে বলে দিতে পারত- প্রার্থনায় উর্ধাঙ্গে সাদা কাপড় পরিধান করে আসার জন্য। এইরকম কোনো সতর্কতা ছাড়াই আমাকে নোংরা ভাষায় শাসন করা হয়। কথাগুলো শুনছিলাম আর মনে মনে চিৎকার করে কান্না করছিলাম- আমি কোন জানোয়ারদের আশ্রমে এসে থাকছি। যেন আমার শরীর থেকে চামড়া খুলে নিচ্ছে। এতটা যন্ত্রণা হচ্ছিল আমার।
এরপর পোশাক পরিবর্তন করে আমি সাথে সাথে কান্না করতে করতে আশ্রম থেকে বের হয়ে যাই। আর আশ্রমের খাবার? হুহ, এইটা নিয়ে আরেকটা লিখা লিখবো।
এই লিখাটা যারা পড়ছেন, রামকৃষ্ণ আশ্রমের কোনো দালাল যদি থেকে থাকেন তাহলে আমাকে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে যাবেন।
– কোন অধিকারে, কোন বিধানে একজন অদীক্ষিত দর্শনার্থীর পোশাক নিয়ে হয়রানি করা হল?
– এটা কি আসলেই একজন সন্যাসীর আচরণ?
– কোন অধিকারে একটা শুদ্র হয়ে একজন উচ্চ বংশীয় ব্রাহ্মণকে নোংরা ভাষায় শাসন করলো?
– কোন অধিকারে একজন শুদ্র রামকৃষ্ণ আশ্রমে থেকে এতটা নোংরা ব্যবহার করার যোগ্যতা রাখে?
– মনুসংহিতায় একটা নির্দেশনা দেখাতে পারবেন যেখানে পোশাকের জন্য একটা শুদ্র হয়ে উচ্চ বংশীয় ব্রাহ্মণদের সাথে নোংরামি করবে?
আমি সকল বাবা মায়ের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ জানাই, এইসব নোংরা জায়গায় আপনার সন্তানদের পাঠিয়ে শারিরীক এবং মানসিক অত্যাচারে ভুগাবেন না।